নিজস্ব প্রতিবেদক: ঈদের বাকি আর তিন দিন। অন্য বছরের মতো হাঁকডাক নেই সিলেটের কুরবানীর গরুর হাটে। এবারও নগরীর কাজিরবাজার গরুর হাটসহ আশপাশের হাটে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বেপারীরা গরু নিয়ে এসেছেন। আছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। কিন্তু, গতকাল মঙ্গলবারও হাটে ক্রেতার ভিড় ছিল না। দেখা গেলো, মাঝে মধ্যে দু-চারজন ক্রেতা আসছেন, কেউ পশু ক্রয় করছেন, আবার কেউ দরদাম যাচাই করে চলে যাচ্ছেন। শেষ মুহূর্তে বাজার জমবে কি না-এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় গরু ব্যবসায়ীরা।
অন্য বছর ঈদের সপ্তাহ-দশদিন আগেই কাজিরবাজার পশুর হাট জমজমাট হয়ে উঠতো। গতকাল মঙ্গলবার গিয়ে দেখা যায়, করোনা মহামারীর প্রভাবে এবার এই বাজারটি ‘মনমরা’ অবস্থায় রয়েছে। প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে অন্য বছর কুরবানীর আগে প্রবাসীরা দেশে আসতেন। বাজার থেকে নিজেদের পছন্দমতো একাধিক গরু কিনে কুরবানী দিতেন। আর যারা আসতে পারতেন না তারা আত্মীয় স্বজনদের মাধ্যমে গরু কুরবানী দিতেন। গরু বেচাকেনা, দরদাম নিয়ে সরগরম থাকতো বিভিন্ন বাজার, পাড়া-গলি। এবার সিলেটের কুরবানী বাজারের চিরচেনা এই দৃশ্য একেবারে নেই। মহামারি করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীরা এবার ঈদে দেশেও আসেননি এবং কুরবানী দিতেও পারছেন না।
কাজিরবাজারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে গরু নিয়ে আসা সিরাজ নামে এক বেপারী জানান, রোববার থেকে তারা ৪ জন ২০টি গরু নিয়ে সিলেট এসেছেন। এ পর্যন্ত একটি গরু বিক্রি করতে পেরেছেন। তিনি জানান, অনেক বছরের পরিচিত কাজিরবাজারের গরুর হাট এবার যেন তার কাছে অপরিচিত মনে হচ্ছে। মাঝারী ধরনের গরু মাঝে মধ্যে দু’একজন ক্রেতা এসে দাম জিজ্ঞাসা করলেও বড় সাইজের গরুর কাছেও কোনো ক্রেতা আসছেন না। এবার গরু বিক্রি করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত ফেরত নিয়ে যাওয়ার দুশ্চিন্তায় আছেন বলে জানালেন সিরাজ বেপারী।
স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী আজাদ মিয়া বলেন, ৬টা গরু নিয়ে কয়েকদিন থেকে বাজারে বাজারে ঘুরছি। বিক্রি করতে পারছি না। গত বছর যে গরু ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি, এবার এই গরু ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা দাম হচ্ছে। তারপও গরু নিয়ে বাজারে সারা দিন বসে ক্রেতার দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। মাঝেমধ্যে দু’একজন দরদাম করছে। এবার গরু ব্যবসায়ীদের কপাল পুড়ছে বলে মন্তব্য করেন আজাদ।
এ বছর সিলেট নগরী, সিলেট সদর ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মোট ১০টি পশুর হাটের অনুমোদন দিয়েছে প্রশাসন। হাটগুলো হচ্ছে, নগরীর কাজিরবাজার পশুর হাট, জালালাবাদ থানার শিবেরবাজার পশুর হাট, বিমানবন্দর থানার ধূপাগুল পয়েন্ট সংলগ্ন মাঠে পশুর হাট ও লাক্কাতুরা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পশুর হাট, দক্ষিণ সুরমা থানার লালাবাজার পশুর হাট ও কামালবাজার জাবেদ অটো রাইছ মিলের মাঠে পশুর হাট, মোগলাবাজার থানার জালালপুর বাজার পশুর হাট, রেঙ্গা হাজীগঞ্জ বাজার পশুর হাট, রাখালগঞ্জ বাজার পশুর হাট ও কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনাল পশুর হাট। এসব হাটের বাইরেও সিলেট নগরীতে ইতোমধ্যে কয়েকটি অবৈধ পশুর হাট বসেছে। তবে স্থানীয়রা জানান, এবার সিলেটে কুরবানীর বাজার মন্দা থাকায় অন্য বছরের ন্যায় পাড়ায় ও গলিতে অবৈধ পশুর হাট বসার সম্ভাবনা কম।
হাফিজুর রহমান নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, অন্য বছর নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ, বগুড়া, ঝিনাইদহ, রাজশাহী, মাগুরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা ট্রাকে করে গরু নিয়ে সিলেট আসতেন। এ বছর আগের মতো গরুর ট্রাক আসছে না। বিদেশি গরুও তেমন বাজারে নেই। তুলনামূলকভাবে বাজারে গরুর সংখ্যা কম, তারপরও দাম উঠছে না, বাজারে ক্রেতা নেই। তিনি বলেন, বিদেশি বড় জাতের গরুর ক্রেতা এবার একেবারে নেই। এ পর্যন্ত যা বিক্রি হয়েছে মাঝারি ধরনের গরুই বিক্রি হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার সিলেট জেলায় কুরবানীযোগ্য পশুর সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজারের মতো হবে। গত বছর সিলেট জেলায় কুরবানি হয়েছিল ১ লাখ ৮৭ হাজার ১৩৯ টি। প্রতি বছরই বাইরের অঞ্চল থেকে আসা গরু দিয়ে কুরবানীর পশুর চাহিদা পূরণ করা হয়। এবারও তাই হবে। তবে এ বছর করোনা মহামারীর জন্য অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অন্য বছরের তুলনায় কুরবানী কম হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রবাসীর এক আত্মীয় জানান, দেশ-বিদেশে মিলে প্রতি বছর তার পরিবার ৩টি কুরবানী দেয়। কুরবানীর ঈদ সামনে রেখে অনেক সময় প্রবাসী স্বজনরা দেশে আসেন। করোনা মহামারীর জন্য প্রবাসীরা অর্থনৈতিকভাবে খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এবার দেশে আসা দূরে থাক, তারা কুরবানীই দিচ্ছেন না। তাই এবছর তাদের পরিবার অন্য এক পরিবারের সাথে অংশীদার হয়ে কুরবানী দিচ্ছেন।